শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১

শিক্ষার্থীদের টিকাদান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী?

শিক্ষার্থীদের টিকাদান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী? ইমদাদুল আজাদ, ঢাবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ লাখেরও বেশি। এসব শিক্ষার্থীর সকলকে অল্প সময়ের মধ্যে টিকা দিয়ে দেয়া সময় সাপেক্ষ এবং নানা রকম জটিলতা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আছে, যাদের মধ্যে টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা দেখা যাচ্ছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী নুরুল আজম, গেল মাসের শুরুতে কলেজ থেকে নির্দেশনা পেয়েছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে টিকার জন্য নাম জমা দিতে, কিন্তু নিবন্ধনের পরও টিকা নিতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, যখন আমরা সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করছি, সেক্ষেত্রে আমাদের রেজিস্ট্রেশনগুলি হচ্ছেনা। ১৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও আমরা কেউ ভ্যাকসিন নিতে পারিনি। এখন পর্যন্ত আমরা জানি না যে, আমাদের তথ্যগৃলো পাঠানো হয়েছে কিনা। তবে সবার অবস্থা অবশ্য আজমের মতো নয়, বিশেষত পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই জানাচ্ছেন সহজেই টিকাপ্রাপ্তির কথা। যদিও সেখানেও আছে নানা জটিলতা। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা বলছিলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের নাম এবং এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করে নিয়েছিল। এরপরেই সুরক্ষা অ্যাপ ব্যবহার করে আমি রেজিস্ট্রেশন করে নিই। কিছুদিনের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়ে নিয়েছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিমি রফিক বলছিলেন, প্রথমেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি নোটিশ প্রদান করা হয় পরবর্তীতে আমরা সেই নোটিশ অনুযায়ী তথ্য প্রদান করি এবং সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনটি সম্পন্ন করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লামিয়া মজুমদার বলেন, অনেকেই নিবন্ধন করতে পারে নাই তার প্রধান একটা কারণ হচ্ছে, অনেকের জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডি কার্ড নেই। এ সম্পর্কে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসাইন বলেন, আমাদের ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো টিকার বাইরে রয়ে গেছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের একটা বিরাট অংশ হচ্ছে আসলে ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। তাদের অনেকেরই এনআইডি নাই বা জাতীয় পরিচয় পত্র অনেকে করেনি। যারা জাতীয় পরিচয় পত্র করেছে তারা আমাদের তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে রেসপন্স করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে কিভাবে? করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে বাংলাদেশ তারমধ্যে তৃতীয়। গেল মার্চে বিশ্ব ব্যাংক এই প্রতিবেদন করে। মূলত করোনা ভাইরাসের মধ্যে নানারকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্বের অনেক দেশ স্কুল খুললেও বাংলাদেশ বরং দফায় দফায় বাড়িয়েছে বন্ধের মেয়াদ। এর পেছনে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঝুঁকি সরকার নিতে চায় না, সরকারের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য এলেও সমালোচনা আছে বিস্তর। এমনকি বিশ্বব্যাপী সংক্রমনের গতিপথ যেখানে অনিশ্চিত সেখানে কতদিন সরকার অপেক্ষা করবে এবং কবে নাগাদ কি উপায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে সেটার কোনো নির্দিষ্ট অ্যাকশন প্ল্যান আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তবে শিক্ষা উপমন্ত্রী অবশ্য বলছেন এবার তারা সেপ্টেম্বর নাগাদ সীমিত পরিসরে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার উদ্যোগ নিতে চান। তিনি বিবিসি বাংলার একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা আশা করছি আমাদের ছাত্র-ছাত্রী যে জনসংখ্যা আছে, সেটা খুব শীঘ্রই সেটার বেশিরভাগ ভ্যাকসিনেটেড হয়ে যাবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম চলবে এবং আমরা আশা করছি সংক্রমণ যদি কিছুটা কমে আসে আমরা শারীরিক উপস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কিয়দংশ খুলতে পারবো বলে আশা করছি। কিন্তু টিকা নিতে নিবন্ধন এবং সদ্য ১৮ পেরোনো শিক্ষার্থীদের এনআইডি কার্ড না থাকার যে জটিলতা সেটা কিভাবে কাটবে এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা সেখানে বলে সেটাকে ডেডিকেশন করার চেষ্টা করছি। তবে শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা স্টুডেন্ট আইডি কার্ড নিয়ে কেউ যদি উপস্থিত থাকে, বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদেরকে দেয়া হবে, কিন্তু অপেক্ষা অপেক্ষা করতে হচ্ছে সবাইকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টিকার আওতায় আসলেও স্কুল শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়। ফলে এক্ষেত্রে সরকার জোর দিচ্ছে সামগ্রিকভাবে পুরো দেশেই সংক্রমণ কমিয়ে আনার ওপর। কিন্তু বাংলাদেশে এটা কতদিনের সম্ভব হবে তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন আছে তেমনি সংক্রমণ ন্যূনতম পর্যায়ে কমে না আসলে স্কুলগুলো যে খুলবে না সেটাও বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: